বরিশালের দর্শনীয় স্থান

রিশালকে বলা হয় বাংলার ভেনিস । এই বরিশাল বিভিন্ন কারণে বিখ্যাত । এখানে রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান । সেগুলোর মধ্যে কিছু নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করব।  



বরিশালের দর্শনীয় স্থান





তাহলে আর সময় নষ্ট না করে আসুন দেখি বরিশালের দর্শনীয় স্থান গুলো কি কি । 




শের-ই-বাংলা জাদুঘর


বরিশালের ওয়াজেদ স্মৃতি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ও চাখারে চাখার বালক উচ্চবিদ্যালয় এর সাতাশ শতক জমির উপরে শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর অবস্থিত। এটি বাংলার বাঘ বলে খ্যাত শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের স্মরণে তৈরি করা হয়েছে । 



বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর অধীনে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৮২ সালে তৈরি করেছে । এটি শেরেবাংলার বসতভিটার একাংশে নির্মিত হয়।  



এখানে বিরল আলোকচিত্র,তার ব্যবহৃত আসবাবপত্র, চিঠিপত্র ও তাকে,সৈয়দ আনিছুজ্জামান নামক ব্যক্তির সুন্দরবন থেকে শিকার করা উপহার হিসেবে পাঠানো কুমির সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে । 


জাদুঘরটি চার কক্ষ বিশিষ্ট এছাড়াও এখানে রয়েছে একটি গ্রন্থাগার। এখানে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে সামাজিক রাজনৈতিক, পারিবারিক ছবি, পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত শেরে বাংলার বিভিন্ন কর্মকান্ডের ছবি, আরাম কেদারা, কাঠের খাট, তোষক, আলনা, ড্রেসিং টেবিল, টুল, চেয়ার-টেবিল, হাতের লাঠি, পানীয় পানের গ্লাস এবং কিছু মালপত্র ।



এগুলো ছাড়াও আরো অন্যান্য কিছু প্রত্ন নিদর্শন প্রদর্শিত হয় ।


 

লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি




বরিশাল জেলার সদর উপজেলার পাকুটিয়া গ্রামে লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি নামে একটি ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি অবস্থিত । 



প্রাসাদটির বেশিরভাগ অংশ বর্তমানে ধ্বংস হয়ে গেছে । প্রাসাদটির এখন শ্যাওলায় আচ্ছাদিত হয়ে গেছে । এটি এখন কৃষি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে রয়েছে । অনেক পর্যটক প্রাসাদটি দেখতে আসেন ।






দুর্গাসাগর দিঘী


বরিশাল জেলার একটি বৃহৎ দীঘি হলো দুর্গা সাগর দীঘি । এটি স্বরূপকাঠি নামক জায়গায় অবস্থিত যা বরিশাল শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে । পুকুর, পাড় এবং অন্যান্য জমি মিলিয়ে এর মোট আয়তন ৪৫.৪২ একর । 



সন্দ্বীপের পঞ্চদশ রাজা শিব নারায়ন ১৭৮০ সালে এই পুকুরটি খনন করে তার স্ত্রীর নামে নামকরণ করেন । স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে ১৯৭৪ সালে পুকুরটি সংস্কার করে । 



বর্তমানে এটি বগুড়া জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে রয়েছে । এবং এটি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ।




গুঠিয়া মসজিদ



গুঠিয়া মসজিদ যার পূর্ণ নাম বাইতুল আমান জামে মসজিদ এটি বরিশাল জেলায় অবস্থিত একটি বিখ্যাত মসজিদ।  মসজিদ প্রাঙ্গনে একটি ঈদগাহ রয়েছে । যেখানে  ২০,০০০ এর অধিক মানুষ একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে।  



এই মসজিদটি গটিয়া মসজিদ নামেও খ্যাত এটি বরিশাল জেলার গুঠিয়ার চাংগুরিয়া গ্রামে অবস্থিত । মিনারের উচ্চতা প্রায় ১৯৩ ফুট । সব মিলিয়ে মসজিদটির আয়তন প্রায় ১৪ একর । 



মসজিদ ছাড়াও এখানে রয়েছে এতিমখানা, ডাকবাংলো, গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা, পুকুর, দিঘী, ঈদগাহ ময়দান । এছাড়াও এখানে একটি হ্যালিপ্যাড রয়েছে । 





ভাসমান পেয়ারা বাজার



বরিশাল পিরোজপুর এবং ঝালকাঠি জেলা সবচেয়ে বড় পেয়ারা বাগান গড়ে উঠেছে। বরিশাল জেলা বানারীপাড়া উপজেলা পেয়ারা চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত । 



বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ঝালকাঠি জেলার ভিমরুলিতে ভাসমান হাট অবস্থিত । ভিমরুলি গ্রামের ১৫ কিলোমিটার লম্বা একটি খালের মধ্যে সপ্তাহের প্রতি দিনই পেয়ারার হাট বসে । এটি এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান পেয়ারার বাজার।  








সাতলা শাপলা গ্রাম



শাপলা ফুলের একটি রাজ্য হলো শাপলা গ্রাম সাতলা । একে শাপলা ফুলের রাজ্য বলার কারণ এখানে বিলের পানিতে ফুটে থাকে হাজার হাজার লাল শাপলা। 



বরিশাল সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে সাতলা গ্রামের অবস্থান । এটি বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলায় অবস্থিত । এই গ্রামের বিলগুলো স্থানীয়দের কাছে শাপলার বিল নামে পরিচিত।  




বিবির পুকুর




১০০ বছরের পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী একটি কৃত্রিম জলাশয় হল বিবির পুকুর।  এটি বরিশালের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত । জনগণের পানির কষ্ট দূর করার জন্য ১৯০৮ সালে জিন্নাত বিবির উদ্যোগে খনন করা হয় । 



এর দৈর্ঘ্য ৪০০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮৫০ ফুট। পরবর্তীতে জিন্নাত বিবির নামে এই পুকুর বিবির পুকুর নামে পরিচিত হয়।  দেশের অন্য কোন জেলা শহরে এইরকম জলাশয় নেই । এটি বরিশাল জেলার সৌন্দর্য অনেক অংশে বৃদ্ধি করেছে ।




ব্রজমোহন কলেজ


ব্রজমোহন কলেজ সংক্ষেপে বিএম কলেজ বাংলাদেশের একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । এটি বরিশাল শহরেই অবস্থিত ।



প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। সেই সময় এই কলেজের মানে তুই উন্নত ছিল একে দক্ষিণ বাংলার অক্সফোর্ড বলা হত । বর্তমানে কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত । ১৯৬৫ সালে এটিকে জাতীয়করণ করা হয় ।



মাত্র ১১ টি ছাত্র নিয়ে এই কলেজ যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এখানে ছাত্রদের জন্য তিনটি হোস্টেল, মেয়েদের জন্য একটি হোস্টেল রয়েছে।  প্রায় ৪০,০০০ বই দ্বারা সমৃদ্ধ এই কলেজের লাইব্রেরী। এছাড়াও এই কলেজে রয়েছে বাণিজ্য ভবন, কলাভবন, অডিটোরিয়াম, বিজ্ঞান ভবন, ৩ টি খেলার মাঠ এবং দুইটি পুকুর । 




জীবনানন্দ দাশ এর বাড়ি



বরিশাল শহরের আম্বিয়া হাসপাতালের একটু পরেই রয়েছে একটি বাড়ি । যার নাম 'ধানসিড়ি' । এটিই জীবনানন্দ দাশ এর বাড়ি । 



যদিও বাড়িটির অবস্থা বর্তমানে বেশি ভালো নয় । তারপরেও অনেক মানুষ জীবনানন্দ দাশ এর বাড়ি দেখতে আসেন। 



এই বাড়িটির পূর্বনাম ছিল সর্বানন্দ ভবন। সর্বানন্দ দাশ ছিলেন জীবনানন্দ দাশের পিতামহ । তিনি বরিশাল কালেক্টরেট অফিসে চাকরি করতেন । 





শেষ কথা


আশা করি এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি বরিশালের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন । এগুলো ছাড়াও বরিশালে আরো দর্শনীয় স্থান রয়েছে । যেমন কিছু হলো, 


  • বঙ্গবন্ধু উদ্যান(বেলস পার্ক)

  • বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

  • শ্বেতপদ্ম পুকুর

  • মুকুন্দ দাসের কালিবাড়ী

  • মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ



এই রকম ভ্রমণ বিষয়ক আর্টিকেল পড়তে আমাদের ব্লগে নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন ।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.